,

কোটালীপাড়ায় কলেজের প্রতিষ্ঠাতা নিয়ে দ্বন্দ্ব

কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি : সরকারি শেখ রাসেল ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা নিয়ে দু’ জনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। এরা হলেন কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি গৌর চন্দ্র বিশ্বাস ও কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ বাড়ৈ।

গত ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়।

এ আনন্দে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা গৌর চন্দ্র বিশ্বাস কোটালীপাড়ায় পোস্টারিং করেন। এ ছাড়া ওই কলেজের অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ বাড়ৈও প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে পোস্টারিং করেন। সেখানে রবীন্দ্রনাথ বাড়ৈ নিজেকে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ হিসেবে পরিচয় দেন।

হঠাৎ অধ্যক্ষ নিজেকে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচয় দেওয়ায় এলাকায় আলোচনার ঝড় ওঠে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলোচনা-সমালোচনার শুরু হয়। এখনোও এই দু’জনের মাঝে রশি-টানাটানি অব্যাহত রয়েছে।

কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মাখন লাল গাইন বলেন, আমাদের এলাকা ছিলো পশ্চাৎপদ নিম্নজলাভূমি বেষ্টিত। এখানে দরিদ্র মানুষের বসবাস বেশি। দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েদের বাইরে গিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ ছিলো দূরূহ ব্যাপার। তাই আমরা কুমুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌর চন্দ্র বিশ্বাসের নেতৃত্বে ২০ জন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এলাকায় কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেই।

১৯৯৫ সালে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় কলেজ প্রতিষ্ঠা করে রবীন্দ্রনাথ বাড়ৈকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেই। গৌর চন্দ্র বিশ্বাস ধার দেনা করে ও চড়া সুদে ৭ লাখ টাকা এনে কলেজ প্রতিষ্ঠায় ব্যয় করেন। দেনার দায়ে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার ৭ বছর আগেই চাকরি থেকে অবসর নেন। পেনশনের টাকায় ধার দেনা পরিশোধ করেন। কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গৌর বিশ্বাসকে সরস্বতী পূজার দিন কলেজে নিয়ে বিশেষ সম্মান দেওয়া হতো।

দুর্নীতির দায়ে ২০০৩ সালে অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ বাড়ৈকে আরপিটিশন বোর্ড চাকুরিচ্যুত করে। ২০১০ সালে তিনি ফের অধ্যক্ষ পদে চাকরি ফিরে পান। তারপর থেকে গৌর বিশ্বাসকে সরস্বতী পূজার দিন বিশেষ সম্মান দিয়ে কলেজে বরণ ও সম্মাননা দেওয়া বন্ধ করে দেন। কলেজের অধ্যক্ষ নিজেকে এখন অবৈধভাবে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা দাবি করছেন।

কলেজের প্রতিষ্ঠাতা গৌর চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, কলেজের পেছনে আমি আমার পেনশনের সব টাকা ব্যয় করেছি। কলেজ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমি এ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে এলাকায় পরিচিত। কিন্তু হঠাৎ অবৈধভাবে মিথ্যাচার করে কলেজের অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ বাড়ৈ নিজেকে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা দাবি করছেন। এটি খুবই নিন্দানীয়। আমি এ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আমি স্বীকৃতি চাই। এ জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

কলেজের অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ বাড়ৈ বলেন, কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আমি গৌর চন্দ্র বিশ্বাসকে অস্বীকার করি না। কিন্তু কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় আমিসহ এলাকার সমাজ সেবক সিদ্ধেশ্বর হালদার, সুভাষ চন্দ্র হাজরা, নিরোদ বরণ বিশ্বাস কাজ করেছেন। সুতরাং এ কালেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য গৌর চন্দ্র বিশ্বাসসহ আমরা ৫ জন। এ কলেজ গৌর চন্দ্র বিশ্বাস একা প্রতিষ্ঠা করেননি। আমিও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এ কারণে আমি নিজেকে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ হিসেবে পরিচয় দিচ্ছি।

এই বিভাগের আরও খবর